তোমরা কখনই আমাকে চিনতে পারোনি

তোমরা কখনই আমাকে
চিনতে পারোনি
শুধু মনে করেছো
আমি তোমাদের মা
না আমি একজন জননী
খোদার পরেই আমি
খোদা আমকে নারী করেছেন
সৃষ্টির জন্যে
আমার আরেক নাম প্রকৃতি
জগতের সব কিছুই
সৃষ্টি হয় আমার নামে
সত্যিই তোমরা
আমাকে চিনতে পারোনি
আমি তোমাদের কাছে ছিলাম
শুধুমাত্র একটি শব্দ
যাতে কোন আবেগ বা
মমত্ববোধ ছিলনা
ছিলনা কোন
গভীর ভালবাসা
আজ আমি সেই বন্ধনও
ছিন্ন করলাম।
খোদার আরশের কাছেই
মায়ের ঠিকানা
বুঝার মতো কোন
ক্ষমতা তোমাদের
কখনোই ছিলনা
আমি তোমাদের
ক্ষমা করে দিয়ে
মায়ের আসন ত্যাগ করলাম
মা শব্দটি ও মুছে দিলাম।

গুলশান। ১২ই আগষ্ট। সন্ধ্যায়।

বাপজান আমাকে কেন কবর দিচ্ছো

হাজার বছর আগেও
আমাকে জ্যান্ত কবর দিতো
আমার বাপ
বাপজান কেন কবর দিচ্ছ
কি আমার অপরাধ
বাপের কোন উত্তর নাই।
হাজার বছর পরেও
ভ্রূণ হত্যা হয় হাজার হাজার
কোথায় সভ্যতা কোথায় জ্ঞান
আমার অপরাধ
আমি একজন মেয়ে
তাই বাঁচার অধিকার নেই
কি নিষ্ঠুর এ সমাজ
কি নিষ্ঠুর এ দেশ ও রাস্ট্র
বলোতো আমি ছাড়া
কিভাবে আবাদ হতো
এ পৃথিবী এ জগত সংসার।
আজও এ পারমানবিক যুগে
মেয়েরা অবহেলিত
আমি মেয়ে
তাই আমি আজও মানুষ হতে পারিনি
জানিনা বাপজান কখন
আমাকে মানুষের মর্যাদা দেবে
বর মনে করে
আমি এক চিরস্থায়ী দাসী
রমণের স্থায়ী এক রোবট।

গুলশান। ১৩ই আগস্ট। সকাল বেলা।

আমি আসলে কার মা ছিলাম

আমি তোমাদের রেখে
চলে গেলাম চিরতরে
আমার যা সামর্থ্য ছিল
সবই দিয়েছি আমি
বিদায়ের বেলায়
কি আর বলবো
না বলা কথাগুলো
রেখে দিলাম গোপনে
অচেনা অজানা অন্ধকারে।
তোমরা শেষ অবধি
আমাকে কার মা বানিয়েছো
এর ঘর ওর ঘর করে
আমার দিন কেটেছে
যখন ছোট ছিলে
তখন একটা ঘর ছিল
একটা ঘর ছিল
কোল ছিল একটা
বুক ছিল একটা
বাস্তবতা হলো এক সময়ে
বউ আপন হয়ে যায়
বউয়ের কথাই বেদবাক‍্য
ঘর দুয়ার সবইতো মায়ের ছিল
আজ কিছু নাই
তাই চলে গেলাম
শেষ ঠিকানায় চিরদিনের মতো
তোমরা সুখে থাকো।

জাতীয় প্রেসক্লাব। ১২ আগষ্ট। দুপুর বেলা