কান্নার আওয়াজ কি আসছে কানে
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া
সাভার থেকে শাপলা
রাত গভীর হলে কালো চাদরে ঢাকা
গ্রাম গুলো ঘুরে আসি
চলো বন্ধু।
এইযে দেখছো কালো অন্ধকারে
ওই দূরে একটা কুপি বাতি জ্বলছে
চলো আরেকটু এগিয়ে যাই
এবার কি শুনতে পাচ্ছো
কোন এক মায়ের বুক ভাংগা কান্না
মাগো,মা আমার মর্জিনা
কেন গেলি ওই পাষাণ হৃদয়হীন ইটের শহরে
এমনি করে তোর বাপজানও গিয়েছিল ওই শহরে
আর ফিরে আসেনি
না কবর
না কোন নিশানা
কেউ কোন খবর দিতে পারেনি
শুনেছি রাতের অন্ধকারে
সরকারী লোকেরা আগুন দিয়েছিল এতীমের বস্তিতে।
চলো বন্ধু দেখে আসি
তেতুলিয়ার সেই গ্রামটি
যেখানে ঘরে কান্নার রোল
সকাল বিকাল,দুপুর সন্ধ্যা
রাত গভীর হলে
হরিদিয়ার নিঝুম গাঁয়ে দশটি মেয়ে নিখোঁজ
শত মাইল পাড়ি দিয়ে
ওরা গিয়েছিল
সোনার বাংলার রাজধানীতে
ওরাও একদিন স্কুলে গাইতো দল বেঁধে
আমার সোনার আমি তোমায় ভালবাসি
চোখে ছিল সোনালী স্বপ্ন
একদিন সব কিছু হবে
সত্যিই সব কিছু
না কিছুই হয়নি
না কোন স্বপ্ন
না কোন জীবন
চিকিত্সা বিহীন দারিদ্র নামক ক্যানসার
ওদের বাধ্য করে বিরাণ গ্রাম ছাড়তে
ওদের বাধ্য করে ঘর ছাড়তে
বাধ্য করে বস্তির এক নতুন জীবনে
বাধ্য করে কারো লালসার শিকার হতে
বাধ্য করে ক্রীতদাসের মতো জীবনকে বিক্রী করে দিতে
বাধ্য করে কুমারী মা হয়ে যেতে
আর বাধ্য করে নিজের গতরকে রক্তশূন্য করে
কিছু মানুষের শরীরে
মাখন জমিয়ে দিতে।
চলো বন্ধু , এবার ফিরে যাবো আলো ঝলমল
রাজার আসন পাতানো
রাজধানীটা একটু দেখি
পাঁচতারা হোটেলের লাউঞ্জে কেমন আছেন
পোষাক কারখানার মালিকেরা
দেখো দেখো,কেমন নাদুস নুদুস
পাজেরো বিএমডব্লু মার্সিডিস আর হামার থেকে
ননীর পুতুল গুলো
ছন্দে ছন্দে হাঁটছে
ওরা আজ এখানে মিলিত হবে গণতন্ত্রের রাজ রাণীদের সাথে
থাকবে প্রিয়তম জাতিসংঘের ঘুমপাড়ানী গায়কেরা
ওদের ঠোঁট গুলো নড়বে
খুব আলতো করে
ওরা আলাপ করবে
জিডিপির কথা
প্রবৃদ্ধির কথা
মাথাপিছু আয়ের কথা
ডলারের মওজুদের কথা
ওরা বার বার বলবে ষোল কোটি মানুষের কথা
বার বার বলবে গ্রাম বালার মানুষের কথা
বলবে ওরা না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবেনা
তারপর সবাই জাতীয় সংগীতের মুর্ছনায়
ফিরে যাবে শোষণের নতুন পরিকল্পনায়
এভাবেই চলছে শত শত বছর
কখনও বৃটিশ
কখনও অবাংগালী
আর কখনও বাংগালী
কারণ এরা কখনও মানুষ হতে পারেনি
কিষান কিষানী , মেহনতী মুজুর আর পোষাক কর্মীর মতো।
Leave a comment
No comments yet.
Leave a comment